Header Ads Widget


বাতজ্বর(Rheumatic Fever)- কারন লক্ষণ ও তার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা




বাতজ্বর (Rheumatic Fever)কি?

সাধারনত গলায় ব্যাথা হলে (টনসিলের সমস্যা) তা যদি যথাযথ ও সম্পূর্ণরুপে চিকিৎসা না করা তাহলে এর থেকে বাতজ্বর হয়। WIKIPEDIA বাতজ্বরের সঙ্গায় বলছে- "Rheumatic fever (RF) is an inflammatory disease that can involve the heart, joint, skin and brain. The disease typically develops two to four weeks after a streptococcal throat infection," অর্থাৎ বাতজ্বর হলো এক প্রকার প্রদাহ জনিত রোগ যা হার্ট, চর্ম, জয়েন্ট ও মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করে। এই রোগ সাধারণত গলায় স্ট্রেপ্টকক্কাল সংক্রমন দ্বারা দুই থেকে চার সপ্তাহ পরে শুরু হয়।

বাতজ্বর (Rheumatic Fever) কাদের বেশী হয়?

  • বাতজ্বর রোগটি সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে বেশী দেখা যায়।
  • তবে অল্প বয়স্ক শিশু ও বড়দেরও বাতজ্বর হতে পারে।

বাতজ্বরের কারন ( Causes of Rheumatic Fever)

  • বাতজ্বরের প্রধান কারন হলো- গ্রুপ এ স্ট্রেপ্টটোকক্কাস ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমন (Group A streptococcas bacterial infection)।
  • স্নগক্রমন জনিত গলায় ব্যাথার সঠিক চিকিৎসা না হওয়া।

 রিস্ক ফ্যাক্টর (Risk Factors)

  • বংশগত (Genetic factors)- পরিবারে অন্য কারো বাতজ্বর থাকলে রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • পরিবেশগত (Environmental factor)- ঘন বসতি পূর্ণ এলাকায় বসবাস (Crowding area)
  •  সুষ্ঠ পয়োঃনিষ্কাসন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব (Poor health system)
  • পুষ্টিহীনতা (Malnutrition)
  •  দারিদ্র্যতা (Lot of poverty)

বাতজ্বরের লক্ষণ(Sign and Symptoms)

  • জ্বর থাকা (Fever)
  • অস্থি সন্ধিতে মৃদু বা তীব্র ব্যাথা (Joint inflammation)
  • ব্যাথা এক অস্থিসন্ধি হতে আরেক অস্থিসন্ধিতে ছড়িয়ে পড়ে
  • অস্থিসন্ধি উত্তপ্ত, লালা হয় ও ফুলে যায় (Redness, Warmth and Swealing)
  • চামড়ার নীচে ক্ষুদ্র ব্যাথাহীন পিন্ড (Subcutaneous skin nodules)
  • বুকে ব্যাথা হয় (chest pain)
  • বুক ধড়ফড় করা (Palpitation)
  • অল্পতে ক্লান্ত ও দূর্বলতা বোধ করা (Weakness)
  • শ্বাসকষ্ট (Dyspnoea)
  • ব্যাথাহীন এবড়ো থেবড়ো কিনারা বিশিষ্ট লালচে দানা (Rheumatic rash)

 বাতজ্বরের জটিলতা (Complication)

  • হৃদ যন্ত্রের প্রদাহ (Carditis)
  • হার্টফেল (Heart failure)
  • বুক ধড়ফড় করা (Palpitation)
  • হার্টের ক্রিয়াগত বিশৃংখলা (Long lasting heart dysfunction)

ডায়াগনোসিস (Diagnosis) 

  • রক্ত পরীক্ষা- Blood test for repeated strep infection (such as ASO test)
  • রক্ত পরীক্ষা- Complete blood count (CBC)
  • ইলেক্ট্রকার্ডিওগ্রাম- Electrocardiogram (ECG)

 কখন ডাক্তার দেখাবেন?

শিশুর গলায় ব্যাথা বা টনসিলের সমস্যা হলে শিশুকে দ্রুত ডক্তারের কাছে নিতে হবে। উপযুক্ত চিকিৎসা বাতজ্বর অনেক খানি প্রতিরোধ করে। রোগের যে সব লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা মাত্র শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে সেগুলো হলো-
  • ঠান্ডা লাগা ছাড়াই নাক দিয়ে পানি ঝরা।
  • গলায় ব্যাথার সাথে গলায় ফোলা ভাব থাকা।
  • কোন কিছু খেতে সমস্যা হওয়া।
  • বিনা কারনে নাক দিয়ে রক্ত ঝরা।
  • গিরা বা অস্থিসন্ধিতে ব্যাথা থাকা।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ( Homeopathic treatment)

বাতজ্বরের চিকিৎসায় নিন্মলিখিত ঔষধ গুলি প্রায়ই ব্যবহৃত হয়-

একোনাইট (Aconite): নির্দেশক লক্ষনাবলী

  • তরুণ বাতজ্বর রোগের সূচনায় ইহা উপকারী।
  • প্রবল জ্বর সহ সন্ধিস্থলে এবং পেশীতে চিড়িকমারা বেদনা।
  • আক্রান্ত স্থান রক্তিম এবং স্ফীত ও বেদনাযুক্ত।
  • ঘাড় আড়ষ্ট ও চোখ মুখ ছলছল ভাব।
  • ঠান্ডা লেগে রোগের সূত্রপাত।

ব্রাইয়োনিয়া (Bryonia): নির্দেশক লক্ষনাবলী

  • কেটে ফেলার ন্যায়,সূচিবিদ্ধের ন্যায়, চেপে ধরার ন্যায় বেদনা।
  • সামান্য নড়চড়াতে বেদনার বৃদ্ধি ও চুপচাপ থাকলে উপশম হয়।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য- মল শুকনো এবং কঠিন।
  • প্রচুর পানি পিপাসা- ঠোট মুখ শুকিয়ে যায়।
  • জিহবা ও গায়ের চামড়া শুকনো।
  • একোনাইটে বেদনার উপশম হলে, ব্রাইয়োনিয়া আরোগ্য করে।

রাসটক্স (Rhus tox): নির্দেশক লক্ষনাবলী

  • রাত্রে, বিশ্রামকালে, প্রাতঃকালে জেগে উঠার সময় এবং শয্যার উত্তাপে বেদনার বৃদ্ধি।
  • নড়াচড়ায় বা আক্রান্ত স্থানে উত্তাপ প্রয়োগে বেদনা উপশম।
  • অত্যন্ত অস্থিরতা।
  • ঠান্ডা বাতাস সহ্য হয় না।
  • প্রথম নড়াচড়ায় বেদনার বৃদ্ধি এবং পরে নড়াচড়ায় উপশম।

আর্নিকা (Arnica): নির্দেশক লক্ষনাবলী

  • আঘাত পেয়ে বা পড়ে গিয়ে বাতজ্বর হলে।
  • কেউ যেন তাকে মেরেছে এমন অনুভূতি।
  • স্পর্শকাতর বেদনা। কাউকে কাছে আসতে দেয় না।
  • বিছানা শক্ত বলে অনুভব করে।
  • পেশী সমূহে বেদনা পরে শক্ত ও আড়ষ্ট হয়ে যায়।

পালসেটিলা (Pulsatila): নির্দেশক লক্ষনাবলী

  • সন্ধিস্থান অল্প স্ফীত ও সামান্য লালচে।
  • পরিবর্তনশীল বেদনা-বেদনা এক স্থান হতে অন্য স্থানে চলে যায়।
  • জানু, গোড়ালী,হাত পায়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সন্ধিতে বেদনা।
  • রোগী খুব গরম কাতর কিন্তু পিপাসা শুন্য।
  • রোগী খুব নরম প্রকৃতির,সামান্য কারনে কান্না করে।
  • ঔষধটি কোমল ও নরম স্বভাবের মানুষদের জন্য নির্দেশিত হয়।

কলোফাইলাম (Cholophylum): নির্দেশক লক্ষনাবলী

  • ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সন্ধিতে বাত বেদনা।
  • হাত পায়ে এবং আঙুলের সন্ধিতে অত্যন্ত বেদনা।
  • বেদনা এক স্থানে বেশীক্ষন থাকে না।
  • গরম প্রয়োগে বেদনার উপশম হয়।

ক্যাল্কেরিয়া কার্ব (Calcarea carb): নির্দেশক লক্ষনাবলী

  •  দৈহিক অবয়ব স্থুলো ও মোটাসোটা।
  • ঠান্ডা লাগার প্রবণতা।
  • শরীরের সমস্ত জয়েন্ট ও মাংসপেশী ব্যাথা হয়।
  • সমস্ত শরীর ঘামে বিশেষত মাথা বেশী ঘামে।
  • রোগীর ডিমের প্রতি অতিরিক্ত চাহিদা।
  • ঔষধটির ধাতুগত বৈশিষ্ট্য প্রধান নির্দেশক।

মেডোরিনাম Medorroeanium): নির্দেশক লক্ষনাবলী

  • সুনির্বাচিত ঔষধের ক্রিয়াহীনতা।
  • বংশগত সাইকোসিস প্রবণতা যুক্ত রোগী ক্ষেত্রে নির্দেশক।
  • বাতজ্বরের বেদনা সমস্ত শরীর আক্রমণ করে।
  • পায়ের গোড়ালি এত ব্যাথা হয় যে রোগী হাটতে পারে না।
  • সমস্ত কষ্ট দিনের বেলা বৃদ্ধি পায়।
  • গরম প্রয়োগে ব্যাথা বেদনা হ্রাস পায়।
  • শরীরের গীটগুলো ফুলে যায়।
  • রোগের কথা বর্ননা করতে চোখে অশ্রু আসে।

টিউবারকুলিনাম Tuberculinum): নির্দেশক লক্ষনাবলী

  • বংশগত ক্ষয়দোষের ইতিহাস।
  • ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার প্রবণতা।
  • গরম সেক ও ম্যাসাজে বাত ব্যাথার উপশম।
  • পরিবর্তনশীল বেদনা।
  • ভ্রমণ পিয়াসি মানুষ।
  • কুকুরের ভীষন ভয়।
  • মাংস খেলে বাত ব্যাথা বাড়ে।

Post a Comment

0 Comments