হোমিওপ্যাথি রোগের চিকিৎসা করে না, রোগীর চিকিৎসা করে অর্থাৎ রোগীর শারীরিক ও মানসিক অস্বচ্ছন্দতার লক্ষণগুলি সংগ্রহ করিয়া সেই মত ঔষধ ব্যবস্থা করে। কিন্তু ইহা শুনিতে যত সহজ কার্যত তেমন নহে। কারণ প্রত্যেক লক্ষণের ভাব, ভঙ্গী, ভিত্তি এবং বৈচিত্র্য বিচার করিয়া তাহাদের যথাযথ মূল্য নিরূপণ ব্যতিরেকে সকল পরিশ্রমই পণ্ড হইয়া যায় ৷
অ্যাব্রোটেনামের প্রথম কথা—পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন রোগ বা রোগের রূপান্তর ।
কোন একটি রোগ আরোগ্য (?) হইবার পর যদি অন্য একটি রোগ প্রকাশ পায় এবং পরবর্তী রোগটি নিরাময় হইবার পূর্বে যদি পূর্ববর্তী রোগটি পুনরায় আত্মপ্রকাশ করে, তাহা হইলে উপযুক্ত ক্ষেত্রে অ্যাব্রোটেনাম কখনও ব্যর্থ হয় না (টিউবারকুলিনাম)। আবার যে ক্ষেত্রে কোন একটি রোগ কুচিকিৎসার ফলে চাপা পড়িয়া ভিন্ন মূর্তিতে দেখা দিয়াছে সেখানেও আমরা ইহার কথা মনে করিতে পারি ।
অ্যাব্রোটেনামের মূলে ক্ষয়দোষ বর্তমান থাকে এবং তজ্জন্য প্রকৃত চিকিৎসার অভাবে রোগশক্তি ক্রমাগত রূপ পরিবর্তন করিয়া নব নব রূপে প্রকাশ পাইতে থাকে । যেমন ধরুন বাত ভাল হইবার পর উদরাময় বা অর্শ ভাল হইবার পর আমাশয় কিম্বা কর্ণমূল প্রদাহ ভাল হইবার পর অণ্ডকোষপ্রদাহ। অবশ্য রোগীর নিকট হইতে এ সম্বন্ধে আমরা কিছুই আশা করিতে পারি না। যতক্ষণ সে বাতে ভুগিতেছিল ততক্ষণ সে জানিত তাহার বাত হইয়াছে এবং এক্ষণে যখন তাহার বাত ভাল হইবার অব্যবহিত পরেই অর্শ বা উদরাময় দেখা দিল, তখন সে বুঝিল না যে কুচিকিৎসার ফলেই তাহার রোগটি বাত-রূপ ত্যাগ করিয়া অর্শ বা উদরাময়-রূপে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে ।
কিন্তু চিকিৎসক এ সম্বন্ধে অনভিজ্ঞ হইলে চলিবে না। রোগ, রোগী এবং ঔষধের চরিত্র সম্বন্ধে সম্যক উপলব্ধিই চিকিৎসকের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। অতএব যেখানে আমরা দেখিব একটি রোগ ভাল হইবার পর আর একটি রোগ দেখা দিয়াছে এবং তাহা আরোগ্য হইতে না হইতেই অন্য একটি রোগ দেখা দিয়াছে বা পূর্ব রোগটি পুনরায় আত্মপ্রকাশ করিয়াছে সেইখানে একবার অ্যাব্রোটেনামকে স্মরণ করিব। অ্যাব্রোটেনামে বাত আছে, অর্শ আছে, গ্রন্থিপ্রদাহ আছে, কিন্তু ইহা তাহার প্রকৃত পরিচয় নহে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন রোগ কিম্বা রোগের রূপান্তর বা স্থানান্তর গ্রহণই তাহার প্রকৃত পরিচয় । যেমন বাত নিম্নাঙ্গ ছাড়িয়া হৃৎপিণ্ড আক্রমণ করিলে বা কর্ণমূলপ্রদাহ ভাল হইয়া অণ্ডকোষ আক্রান্ত হইলে ।
অ্যাব্রোটেনামের দ্বিতীয় কথা—উদরাময়ে উপশম ।
কোষ্ঠবদ্ধ অবস্থায় অ্যাব্রোটেনামের সকল যন্ত্রণা বৃদ্ধি পায় এবং উদরাময় দেখা দিলেই যন্ত্রণার উপশম হয় । পূর্বে যে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন রোগের উল্লেখ করা হইয়াছে তাহার সহিত এই কথাটিও মনে রাখিবেন । বাতের ব্যথাই হউক বা অর্শই হউক অ্যাব্রোটেনামের যন্ত্রণা কোষ্ঠবদ্ধ অবস্থায় বৃদ্ধি পায় এবং উদরাময় দেখা দিলেই উপশম হয়। অতএব যেখানে দেখিবেন রোগী বিভিন্ন রোগে কষ্ট পাইতেছে কিন্তু উদরাময় দেখা দিলেই তাহাদের উপশম হয়, সেখানে একবার ইহাকে স্মরণ করিবেন ।
পর্যায়ক্রমে উদরাময় ও কোষ্ঠবদ্ধতা ।
অ্যাব্রোটেনামের তৃতীয় কথা—ক্ষয়দোষ বা প্রবল ক্ষুধা সত্ত্বেও দেহ শুকাইয়া যাওয়া ।
অ্যাব্রোটেনামের চরিত্র সমালোচনা করিলে দেখা যায় ইহা ক্ষয়দোষের একটি বড় ঔষধ। অবশ্য ইহার প্রথম কথা তাহার প্রকৃষ্ট নিদর্শন । আমাদের বুঝা উচিত যে, কোন রোগ নিয়মিতভাবে পুনঃপুনঃ প্রকাশ পাইতে থাকিলে সেই রোগের ভিত্তি দৃঢ়। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন রোগ বা রোগের রূপান্তর গ্রহণ আরও মারাত্মক এবং সেই মারাত্মক প্রকৃতির পরিচয় আমরা পাই ইহার তৃতীয় কথায় ;
তাই আমরা দেখি প্রবল ক্ষুধা সত্ত্বেও রোগী দিন দিন জীর্ণ-শীর্ণ হইয়া পড়ে (আইওডিন, নেট্রাম-মি, স্যানিকুলা, টিউবারকুলিনাম); ছোট ছোট ছেলেরা ঠিক অশীতিপর বৃদ্ধের মত দেখায়, অর্থাৎ কঙ্কালসার হইয়া পড়ে—শীর্ণ দেহ, মাথা সোজা করিয়া রাখিতে পারে না, দেহের চর্ম লোল ও শিথিল । ছেলেরা রাক্ষসের মত খায় বটে, কিন্তু হজম করিতে পারে না—প্রচুর পরিমাণে মলত্যাগ করে। কিম্বা পর্যায়ক্রমে উদরাময় ও কোষ্ঠবদ্ধতা দেখা দেয়। সাইকোসিস এবং সিফিলিস জনিত শুকাইয়া যাওয়ায় মেডোরিনাম এবং সিফিলিনাম ও শ্রেষ্ঠ ঔষধ।
শুকাইয়া যাওয়া প্রথম পদদ্বয় হইতেই আরম্ভ হয় (আই ওডিন, টিউবারকুলিনাম)। রিকেট বা 'পুঁয়ে-পাওয়া' ক্ষয়দোষেরই নামান্তর। পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব ইহার অন্যতম কারণ হইলেও পিতামাতার মধ্যে পানদোষ এবং যৌনব্যাধি ইহার মূল কারণ। শুধু রিকেট কেন সন্তান-সন্ততির জীবনব্যাপী যাবতীয় চিররোগের মূল কারণই তাহা । অতএব এরূপ প্রকৃতির পিতামাতা সংসারে নিশ্চয়ই অবাঞ্ছনীয় ।
যাহা হউক, শিশুদের অজীর্ণদোষ সম্বন্ধে আমি আরও বলিতে চাই যে, পিতামাতা একত্রে শয়ন করিবার অব্যবহিত পরে শিশুকে স্তন্যদান খুবই অন্যায় এবং শিশু যতদিন স্তন্যপায়ী থাকিবে ততদিন জননীর পুনরায় গর্ভসঞ্চার কোনমতেই বাঞ্ছনীয় নহে ; আরও একটি কথা এই যে, শিশুকে কোনক্রমেই কৃত্রিম খাদ্য যেমন গ্ল্যাক্সো, হরলিকস প্রভৃতি খাইতে দেওয়া উচিত নহে।
যদিও আজকাল অনেক স্বাস্থ্য পাঠের মধ্যে বিদেশী বইয়ের নকল করিয়া খাদ্য তালিকা দেওয়া হয়, কিন্তু আমাদের মনে রাখা উচিত, শীতপ্রধান দেশে যাহা উপযুক্ত, গ্রীষ্মপ্রধান দেশে তাহা উপযুক্ত না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অতঃপর আজকাল জননীরা যে ফিডিং বোতল ব্যবহার করেন ইহাও যে কত বিপজ্জনক, তাহা বলাই বাহুল্য।
অ্যাব্রোটেনামের চতুর্থ কথা—বাচালতা।
পূর্বেই বলিয়াছি অ্যাব্রোটেনামের চরিত্রগত লক্ষণ দেখিয়া মনে হয়, ইহাতে ক্ষয়দোষের যথেষ্ট পরিচয় আছে ; এক্ষণে তাহার বাচালতা দেখিয়া সে সম্বন্ধে আমরা আরও নিঃসন্দেহ হইতে পারি। দারুণ দুর্বলতার সহিত শিশুদের একপ্রকারের ক্ষয়জাতীয় জ্বর। শিশু উঠিয়া দাঁড়াইতে পারে না।
বাত নিম্নাঙ্গ ছাড়িয়া হৃৎপিণ্ড আক্রমণ করে (লিডাম, মেডোরিন ) । সম্মোজাত শিশুর নাভি হইতে রক্তপাত, হাইড্রোসিল বা কুরও। আক্ষেপ বা শূলবেদনার পর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের শিরা টানিয়া ধরা ।
গেঁটে বাত, গ্রন্থি ফুলিয়া আড়ষ্ট হইয়া ওঠে, কোনরূপ নড়াচড়া করিতে পারে না। আক্রান্ত স্থান ফুলিয়া উঠিবার পূর্বে দারুণ যন্ত্রণা ও প্রবল জ্বর। উদরাময়, আমাশয়, অর্শ ইত্যাদি স্রাব চাপা পড়িয়া ।
কটিব্যথা, রাত্রে বৃদ্ধি, নড়াচড়ার উপশম ।
পেটের মধ্যে ব্যথা ও বমি।
হঠাৎ
ক্রুদ্ধভাব ও শীতার্ত ।
প্লুরিসী—যেখানে অ্যাকোনাইট ও ব্রাইওনিয়ার পর আক্রান্ত হলে
.png)

0 Comments